আনারস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক উপায়ে জেনে নিন আজকেই

আনারস চাষ পদ্ধতি

আনারস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে প্রতিনিয়ত মানুষ গুগলে সার্চ করে থাকেন। আনারস বাংলাদেশের খুবই পরিচিত এবং সুস্বাদু একটি ফল। ছোট বড় সকলেই আনারস খেতে পছন্দ করেন। আনারস খুবই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্য উপকারী একটি ফল। আনারসের সব থেকে বেশি চাষ হয়ে থাকে বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে। অনেক বেশি সুস্বাদু হওয়ায় আনারসের চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। আনারসের জুস এবং জেলি ছোট বড় সবাই পছন্দ করে থাকে।

আনারস যে শুধু সুস্বাদু তা কিন্তু নয় এটি খুবই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম আনারসে ৫০ ক্যালোরি শক্তি, ০.৬ গ্রাম প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম চর্বি, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ১.৪ গ্রাম আঁশ এবং ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ রয়েছে। এবং এগুলো ছাড়াও রয়েছে আনারসে আরো খনিজ এবং ভিটামিন পদার্থ রয়েছে। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আনারসে থাকা ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়ক। এবং এটি আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও সাহায্য করে। আনারসে থাকা পটাশিয়াম আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

এগুলো ছাড়াও আনারসের আরও বহু পুষ্টিগুণ রয়েছে। এবং আরো ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ রয়েছে। তাই আনারসের চাহিদা সব সময়ই বেশি থাকে। যার ফলে অনেকেই জানতে চান আনারস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক।

আনারস চাষ পদ্ধতি

সুস্বাদু এবং পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই ফলটিকে চাষ করতে অনেকের আগ্রহ রয়েছে। তাই আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন আনারস চাষের সকল কলাকৌশল এবং সঠিক নিয়ম।

আনারসের জাত:

বাংলাদেশে বেশ কিছু জনপ্রিয় আনারসের জাত রয়েছে। যা একেকটা একেক সময় এবং একেক ধরনের হয়ে থাকে। তাই আপনাকে সঠিক এবং আপনার পছন্দের জাত নির্বাচন করতে হবে। উল্লেখযোগ্য কিছু জনপ্রিয় জাত হলো: হানিকুইন, জায়েন্টকিউ, ঘোড়াশাল, জলঢুপি ইত্যাদি।

হানিকুইন হচ্ছে বাংলাদেশের সব থেকে মিষ্টি আনারসের জাতগুলোর একটি। অনেকাংশে এটিকেই বলা চলে বাংলাদেশের সব থেকে মিষ্টি আনারসের জাত। এটির গড় ওজন হয়ে থাকে ১ কেজি। আরেকটি জাত জায়েন্টকিউ আনারসের গাছের পাতা থাকে সবুজ প্রায় কাটাবিহীন। এই আনারস পেকে গেলেও সবুজ ভাব থাকে এবং ভেতরের শাাঁস থাকে হালকা হলুদ। এটির গড় ওজন হয়ে থাকে ২ কেজি। এবং ঘোড়াশাল ও জলঢুপি জাতের আনারস পেকে গেলে লালচে এবং কিছুটা ঘিয়ে সাদা হয়ে থাকে। পাতা কাটা বিশিষ্ট চওড়া এবং ঢেউ খেলানো। ঘোড়াশাল জাতের গড় ওজন হয়ে থাকে ১.২৫ কেজি। এবং জলঢুপির হয়ে থাকে ১ থেকে ১.৫ কেজি।

জমি ও মাটি:

আনারস চাষের জন্য অবশ্যই জমি এবং মাটির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিক জমি এবং মাটি নির্বাচন না করলে আনারস চাষে ভালো ফলন পাওয়া যাবে না।

আনারস চাষের জন্য উঁচু জমি যেখানে পানি জমে না এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। এবং মাটি হতে হবে দোআঁশ অথবা বেলে দোআঁশ। বাংলাদেশে এই দুই মাটিতে আনারস ভালো জন্মায়। আনারস চাষের জন্য জমি থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উঁচু এবং এক মিটার প্রশস্তবেড তৈরি করতে হবে। এক বেড থেকে অন্য বেডের দূরত্ব রাখতে হবে ৫০ থেকে ১০০ সেন্টিমিটার।

তবে পাহাড়ি এলাকায় জমি নির্বাচন করলে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কেননা বেশি নাড়াচাড়া করলে ভূমিক্ষয় হয়ে যাবে।

চারা রোপন:

বাংলাদেশে আনারসের চারা রোপনের সব থেকে ভালো সময় হচ্ছে মধ্য আশ্বিন থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত। তবে যদি জমিতে সেচ সুবিধা ভালো থাকে তাহলে মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন মাসেও আনারসের চারা লাগানো যেতে পারে। চারা রোপনের ক্ষেত্রে এক লাইন থেকে অন্য লাইনের দূরত্ব রাখতে হবে ৫০ সেন্টিমিটার এবং এক চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব রাখতে হবে কম করে হলেও ৪০ সেন্টিমিটার।

আনারসের সাথে চাইলেই সাথী ফসল হিসেবে আদা, সয়াবিন, সরিষা, কলাই এগুলো চাষ করতে পারেন।

সার ব্যবস্থাপনা:

অন্যান্য ফসলের তুলনায় আনারস চাষ কিছুটা আলাদা হওয়ায় আপনাদের সুবিধার্থে প্রতি গাছের হিসেব অনুযায়ী সারের পরিমাণ দেওয়া হল। আনারস চাষের জন্য চারা প্রতি পচা গোবর ৩১০ গ্রাম, ইউরিয়া সার ৩৬ গ্রাম, টিএসপি সার ১৫ গ্রাম, এমওপি সার ৩৫ গ্রাম, জিপসাম সার ১৫ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। এখানে উল্লেখিত সারের মধ্যে ইউরিয়া এবং পটাশকে পাঁচ ভাগে ভাগ করে ৪-৫ মাস পর থেকে পাঁচ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে। এবং বাদ বাকি অন্যান্য সার বেড তৈরীর সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। আনারস চাষে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য অবশ্যই এই নিয়ম অবলম্বন করে সার প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ এবং আগাছা দমন:

শুকনো মৌসুমে যখন আনারসের জমির মাটি শক্ত হয়ে যাবে বা উষ্ণতা কমে যাবে তখন জমিতে সেচ দিতে হবে। এবং একই সাথে বর্ষাকালে যখন জমিতে বেশি পানি জমে যাবে। যাতে অতিরিক্ত পানি জমে না থাকে এজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। চারা বেশি লম্বা হয়ে গেলে ৩০ সেন্টিমিটার রেখে আগার পাতা গুলো কেটে ফেলতে হবে।

আনারস চাষের ক্ষেত্রে আগাছা খুবই ক্ষতি করে ফসলের। এজন্য বছরে কম করে হলেও দুইবার আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ফল সংগ্রহ করার পর একবার। দ্বিতীয়বার করতে হবে অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাসে। জমিতে সেচ দেওয়ার সময় এবং সার প্রয়োগের পর মালচিং করে নিলে জমি আগাছা মুক্ত থাকে। আগাছা দিয়ে মালচিং করলে একসময় পচে জৈব সার হিসেবে মাটিতে মিশে যায় এবং  এর ফলে মাটির উর্বরতা এবং শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ফসল সংগ্রহ করতে হবে চারা রোপনের ১৫ থেকে ১৬ মাস পর জ্যৈষ্ঠ থেকে মধ্য ভাদ্র মাসে।

প্রিয় পাঠক আশাকরি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি আনারস চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আনারস চাষ পদ্ধতি সহ আরো এমন সব পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন।

আরও পড়ুন – লেটুস পাতা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক উপায়ে জানুন আজকেই