ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক উপায়গুলো জানুন আজই।
ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে প্রতিনিয়ত মানুষ আগ্রহী হচ্ছেন। ছাগল পালন খুবই লাভজনক একটি পেশা হতে পারে। যার ফলে বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ছাগল পালন করা হয়ে থাকে। অনেকেই এখন নিজের জমানো টাকা দিয়ে ছাগলের ফার্ম করার কথাও চিন্তা করে থাকেন। কারণ ছাগল পালনের মাধ্যমে আপনার টাকাকে খুব সহজেই দ্বিগুণ করে ফেলতে পারেন বছর না ঘুরতেই। তবে এর জন্য জানতে হবে সঠিকভাবে ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে। অন্যথায় ছাগল পালনে লাভের বদলে উল্টো লসের মুখে পড়তে পারেন। ছাগল সাধারণত ছাগী এবং খাসি হয়ে থাকে। ছাগী মূলত মহিলা ছাগল এবং খাসি হচ্ছে পুরুষ ছাগল।
বাংলাদেশের ছাগলের যে জাতটি পালন করা হয়ে থাকে সেটির ছাগী সাধারণত ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যেই বাচ্চা জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করে থাকে। আর খাসি সাধারণত ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যেই ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের হয়ে যায়। যার ফলে ছাগল পালন খুব লাভজনক এক পেশা হয়ে দাঁড়ায় কৃষকদের। আবার অনেকে মনে করে থাকেন ছাগল শুধু কিনে এনে জমিতে ছেড়ে দিলেই ছাগল বড় হতে থাকবে। এটি সম্পূর্ণ ভুল ছাগল পালন করার জন্য সঠিক নিয়মে ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হবে।
ছাগল পালন পদ্ধতি
বাংলাদেশের যতগুলো গৃহপালিত প্রাণী রয়েছে তার মধ্যে ছাগল সব থেকে বেশি পালন করা হয়ে থাকে। এটির কারণ ছাগল পালন তুলনামূলক সহজ এবং ছাগল খুব অল্প জায়গায় এমনকি নিজের বসত ঘরেও রাখা যায়। যার ফলে মানুষ ছাগল পালনে বেশি আগ্রহী হয়ে থাকে।
গ্রাম অঞ্চলে যারা ছাগল পালন করে থাকে তারা সাধারন ছাগলকে রাস্তার পাশে কিংবা মাঠে বেঁধে দিয়ে আসে আর তখনই ছাগল রাস্তার পাশ থেকে বা মাঠ থেকে সবুজ ঘাস এবং লতা পাতা খেয়ে আসে। গ্রামের রাস্তার পাশে এবং মাঠে প্রচুর পরিমাণে সবুজ ঘাস রয়েছে। যার ফলে ছাগল সেখান থেকেই পেট ভরে সবুজ ঘাস খেতে পারে। যার ফলে মালিককে আর বাড়তি খরচ করতে হয় না ছাগলের খাবারের পেছনে। বর্ষাকালে যখন ছাগলকে মাঠে নেওয়া যায় না তখন কৃষকরা গরুর মত করে ঘাস কেটে এনে ছাগলকে খাইয়ে থাকে। আর ছাগল থাকার জন্য নিজেদের ছোট ঘর কিংবা অনেকেই নিজেরা যে ঘরে বাস করেন সে ঘরেও রেখে থাকেন কারণ ছাগল খুব অল্প জায়গার মধ্যেই থাকতে পারে।
আবার অনেককে দেখা যায় ছাগলকে আবদ্ধ অবস্থায় পালন করে। চাইলে ছাগল কেও আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা যায়। সেক্ষেত্রে আপনাকে ছাগল পালনের জন্য একটি উপযুক্ত গড় নির্মাণ করতে হবে। ছাগল পালনের জন্য ঘর নির্মাণ করতে খুব বেশি খরচ হবে না। বাঁশ, টিন এবং ছন দিয়ে খুব অল্প খরচে ছাগল পালনের জন্য ঘর তৈরি করতে পারেন। একটি পূর্ণবয়স্ক ছাগল থাকার জন্য তার আনুমানিক ১ বর্গমিটার বা ১০ বর্গফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। তাই এই অনুযায়ী ঘর নির্মাণ করতে হবে। যদি ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে ঘরের মধ্যেই ছাগলকে প্রয়োজনীয় খাদ্য যেমন সবুজ ঘাস, দানাদার খাদ্য এবং পানি দিতে হবে। ছাগলের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন কম করে হলেও দুই থেকে তিন ঘন্টা বাহিরে নেওয়া উচিত। আর শুরুতেই কোন ছাগলকে ঘরে আবদ্ধ করা যাবে না আস্তে আস্তে করতে হবে।
ছাগলের খাদ্য ব্যবস্থা
ছাগল পালন করার জন্য ছাগলের সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা খুবই জরুরী। সঠিক খাদ্য ব্যবস্থা না থাকলে ছাগল বেড়ে উঠতে পারবে না। ছাগল সাধারণত সবুজ ঘাস খেয়ে থাকে। চাইলে ছাগলকে ধানের খর কুচি করেও খাওয়ানো যায়। ছাগলের ছানা মায়ের দুধ দুই তিন মাস পর্যন্ত খেয়ে থাকে। তবে আপনাকে তার আগে যখন ছাগলের বয়স এক মাস হবে তখনই কচি সবুজ ঘাস খাওয়ানো শেখাতে হবে।
রাস্তার পাশে বা মাঠে ছেড়ে দিলে ছাগল নিজেই পেট ভরে ঘাস খেয়ে আসে। তবে যারা ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় রাখবেন ছাগলকে সেক্ষেত্রে ছাগলকে ঘরেই ঘাস কেটে এনে খাওয়াতে হবে। ছাগলের জন্য পুষ্টিকর কিছু ঘাস হল কাঁঠাল পাতা, খেসারি, মাসকালাই, দূর্বা ও বাকসা এই গাছগুলো ছাগলের জন্য খুবই পুষ্টিকর। তাই যদি গাছ কেটে এনে খাওয়াতে হয় তাহলে এই ঘাস গুলো আনুন। তবে সব সময় ঘাসে ছাগল প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না তখন ছাগলকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটানোর জন্য দানাদার খাদ্য খাওয়ানো হয়ে থাকে। ছাগলের কিছু দানাদার খাদ্য হলো গম, ভুট্টা, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, বিভিনড়ব ডালের খোসা, খৈল, শুঁটকি মাছের গুঁড়া ইত্যাদি। ছাগলকে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি মেটানোর জন্য এগুলোর সাথে ভিটামিন ও খনিজ মিশিয়ে ছাগলকে খাওয়ান।
সব প্রাণীরই পানির পিপাসা লাগে ছাগলও তার ব্যতিক্রম নয়। ছাগলকে প্রতিদিন এক থেকে দুই লিটার পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। ছাগল যেন যখন পিপাসা পায় তখনই খেতে পারে তাই ছাগলের কাছাকাছি পানি রাখতে হবে।
ছাগলের রোগ
অন্যান্য সব প্রাণীর মতো ছাগলেরও রোগ হয়ে থাকে। তবে অনেক সময় দেখা যায় শুধুমাত্র কৃষকের অবহেলার কারণে ছাগলের রোগ হয়। তাই সব সময় ছাগলের পরিচর্যা করতে হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে অনেক সময় ছাগলের নিউমোনিয়া হয়ে যায় তাই শীতকাল আসলে ছাগলের ঘরের মেঝেতে কাঠের গুঁড়া বা তুষ বিছিয়ে দিন। শীতের তীব্রতা খুব বেশি হলে ছাগলের ঘরের দেয়ালে পাটের ছালা দিয়ে দিন। ছাগলের সাধারণত তিন প্রকার রোগ হয়ে থাকে সেগুলো হলো: ভাইরাস জনিত রোগ, ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ, পরজীবীজনিত রোগ। এই রোগগুলোর লক্ষণ হলো:
- শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।
- চামড়ার লোম খাড়া দেখায়।
- খাদ্য গ্রহণ ও জাবরকাটা বন্ধ হয়ে যায়।
- ঝিমাতে থাকে ও মাটিতে শুয়ে পড়ে।
- চোখের পানি ও মুখ দিয়ে লালা নির্গত হয়।
ছাগলের যদি এ লক্ষণ গুলো দেখতে পান তাহলে দ্রুত একজন পশু ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সব সময় ছাগল এবং ছাগলের ঘরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
প্রিয় পাঠক আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি ছাগল পালন পদ্ধতি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন আরও এমন সব আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আরও পড়ুন – হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক উপায়গুলো জেনে নিন আজই