বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক উপায়গুলো জেনে নিন।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে প্রতিনিয়ত মানুষ এটা নিয়ে গুগলে সার্চ করে থাকেন। আপনাদের সুবিধার্থে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের জানাবো বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সকল তথ্য।
আদা আমাদের খুবই প্রয়োজনীয় একটি মসলা বা খাবার। যা আমাদের প্রতিদিনই দরকার পড়ে। আদাকে আমাদের দেশে ব্যবহার করা হয়ে থাকে তরকারির মসলা, চা, এবং আরো কিছু খাবার তৈরিতে। যার ফলে আমাদের সব সময়ই বাজার থেকে চড়া দামে আধা কিনতে হয়। কিন্তু আমরা চাইলে খুব সহজেই বসতবাড়ির কোনায় বা বারান্দায় ছোট পরিসরে এবং অল্প খরচেই আদা চাষ করতে পারি। যা আমাদের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
আদাকে আমরা অনেকেই শুধুমাত্র একটি মসলা বা খাবার হিসেবে চিনে থাকি। আমরা অনেকেই জানিনা আদার রয়েছে বহু পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্য উপকারিতা। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আদায় রয়েছে ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের খুবই উপকার করে থাকে। আধার উল্লেখযোগ্য কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা হলো:
•আদা হজমের রস নিঃসরণে সাহায্য করে এবং পেটের গ্যাস, বমি বমি ভাব, অজীর্ণ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো হজমজনিত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
•আদার অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পেশী ব্যথার মতো প্রদাহজনিত অবস্থার ব্যথা ও ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে থাকে।
•ভ্রমণজনিত বমি বমি ভাব এবং গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাবের জন্য আদা একটি কার্যকর সমাধান।
•আদা রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
•আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে থাকে।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি
বস্তায় আদা চাষ খুবই সহজ এবং লাভজনক। এটি খুব অল্প খরচেই করা যায়। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য।
বস্তা তৈরি এবং মিশ্রণ
আদা চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো: তিন ঝুড়ি মাটি, এক ঝুড়ি বালি, এক ঝুড়ি গোবর সার এবং ফুরাডান ৫জি ২৫ গ্রাম। আদার বস্তা তৈরির জন্য এই উপকরণ গুলোই যথেষ্ট। সবগুলো উপকরণকে একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবং শেষে একটি সিমেন্ট বা যে কোন কিছুর বস্তায় নিয়ে নিন।
চারা তৈরি এবং রোপন
আদার চারা তৈরি করার জন্য দরকার হবে একটি বালিবর্তি টব বা বস্তা। এবার তিন টুকরো আদা কে ছত্রাকনাশক এর মাধ্যমে শোধন করে নিতে হবে। শোধন করার জন্য অটোস্টিন ২ গ্রাম ব্যবহার করে করতে পারেন অথবা অন্য কোন ছত্রাকনাশকের মাধ্যমেও শোধন করে নিতে পারেন। শোধন করার শেষে আধা গুলোকে ছায়ার ভিতরে শুকানোর জন্য আধা ঘন্টা রেখে দেন। এবং শেষে বালি ভর্তি টবে তিন টুকরা আদা কে পুতে দিন।
বীজ বপনের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যেই দেখতে পাবেন চারা গজিয়ে গেছে আপনার বপন করা আদা গুলো থেকে। এবার সেখান থেকে চারাগুলোকে খুব সাবধানে তুলে নিয়ে বস্তায় রোপন করতে হবে। এটি করতে হবে খুবই সাবধানে যাতে গাছের কোন ক্ষতি না হয়। চারা রোপন শেষে বস্তাকে সূর্যের আলো পৌঁছায় এমন একটি জায়গায় রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ
৪ চা চামচ সরিষার খোল এবং আধা চামচ ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে চারা রোপনের দুই মাস পর। আদা চাষের জন্য খুব বেশি সারের প্রয়োজন হয় না। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে বস্তার মাটি যেন বেশি জমে না যায়। বেশি জমে গেলেই মাটিকে কোন কিছুর সাহায্যে আলগা করে দিতে হবে।
আদার বেশ কিছু পরিচিত রোগ রয়েছে যা দেখা দিলেই দ্রুত আক্রান্ত গাছকে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। অথবা কীটনাশক বা ছত্রাকনাশক দিয়ে রোগবালাই থেকে গাছকে রক্ষা করতে হবে তবেই ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
আদার উত্তোলন
আদার ফলন বেশ ভালো হয়। প্রতি বস্তায় আনুমানিক এক থেকে দেড় কেজি আদা পাওয়া সম্ভব। আদার চারা যদি আপনি জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে লাগান সেক্ষেত্রে আদা উত্তোলন করতে পারবেন ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের মধ্যে।
প্রিয় পাঠক আশা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আপনি আদা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। আরো এমন সব প্রয়োজনীয় আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে ঘুরে আসুন।
আরও পড়ুন – মরিচ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক উপায়গুলো জেনে নিন আজই