হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক উপায় জানুন আজকেই।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি, সম্পর্কে অনেকের জানার বেশ আগ্রহ। কারণ হাইব্রিড ভুট্টা খুবই লাভজনক একটি ফসল। যার ফলে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে প্রতিনিয়ত মানুষ গুগলে সার্চ করে থাকেন। ভুট্টা আমাদের দেশের খুবই জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত পরিচিত একটি খাবার। ভুট্টা দিয়ে তৈরি করা যায় নানা রকম মুখরোচক সব খাবার। তার ভেতর অন্যতম একটি হল ভুট্টার খই। ভুট্টার খই কখনো খায়নি এমন মানুষ পাওয়া খুবই দুষ্কর। বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা সিনেমা দেখতে গিয়ে ভুট্টার খই সকলের পছন্দের তুঙ্গে থাকে। তবে কি শুধু খই ? ভুট্টা দিয়ে তৈরি করা যায় নানা রকম পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সব খাবার। তার ভেতরে অন্যতম হলো ভুট্টার রুটি, খিচুড়ি, ফিরনি সহ আরো বহু সুস্বাদু খাবার। যা ছোট বড় সকলেরই বেশ পছন্দের। তবে ভুট্টা শুধু খেতেই সুস্বাদু এমনটা কিন্তু নয়। বহু পুষ্টি গুনাগুনের ভরপুর একটি খাবার হচ্ছে ভুট্টা। ভুট্টা তে থাকা পুষ্টি উপাদান মানুষের জন্য বেশ উপকারী এবং কার্যকরী। ভুট্টা তে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফাইবার মানুষের হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ সহায়ক। পাশাপাশি ভুট্টাতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম মানুষের উচ্চ রক্তচাপ কমায়। যার ফলে মানুষের হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের মতো বড় ধরনের রোগের ঝুকি কমে যায়। পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করতেও ভুট্টা বেশ কার্যকারী। ভুট্টা যেমন স্বাদের এমনি স্বাস্থ্য উপকারী। যার ফলে ভুট্টা চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। তাই অনেকেই ভুট্টা চাষ করতে চান। তাই আমাদের আজকের আর্টিকেল আপনারা জানতে পারবেন হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি।

হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি

ভুট্টার অনেকগুলো জাতের ভিতরে উচ্চ ফলনশীল একটি জাত হচ্ছে হাইব্রিড ভুট্টা। হাইব্রিড ভুট্টার ফলন অধিক পরিমাণে বেশি হয় আমাদের দেশী ভুট্টার তুলনায়। পাশাপাশি হাইব্রিড ভুট্টার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে দেশী ভুট্টা তুলনায় অনেক ভালো। যার ফলে হাইব্রিড ভুট্টা তে রোগবালাই অনেক কম হয় এবং অধিক ফলন হয়। আমাদের দেশি ভুট্টার তুলনায় হাইব্রিড ভুট্টা প্রায় ২০-৩০ পার্সেন্ট বেশি হয়ে থাকে। এবং একই সাথে হাইব্রিড ভুট্টার আরো একটি সুবিধা হচ্ছে এটি যে কোনা আবহাওয়া এবং জলবায়ুর সাথে মানিয়ে নিতে পারে। লবণাক্ত মাটি থেকে শুরু করে বন্যায় পর্যন্ত হাইব্রিড ভুট্টা চাষ হয়।

হাইব্রিড ভুট্টার জাত :

ভুট্টা চাষের ক্ষেত্রে সঠিক জাত নির্বাচন করা বেশ জরুরি। আপনার জমির মাটি পরীক্ষা করে এবং আবহাওয়া ও জলবায়ু বিবেচনা করে সঠিক জাতের ভুট্টা জমিতে চাষ করতে হবে। তবেই এতে অধিক ফলন পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশে হাইব্রিড ভুট্টার অনেকগুলো জাত আবিষ্কার করা হয়েছে। তার ভিতরে সব থেকে পরিচিত কিছু জাত হলো।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১: এটি রবি মৌসুমে চাষের জন্য উপযুক্ত।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ৫: উচ্চ গুণগত মানের এটি আমিষ সমৃদ্ধ একটি ভুট্টার জাত।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ৬: এটি খরিপ মৌসুমে চাষের জন্য উপযুক্ত।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ৮: এটিও খরিপ মৌসুমে চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ৯: খরিপ মৌসুমে চাষের জন্য উপযুক্ত।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১০: এটি রবি মৌসুমে চাষের জন্য উপযুক্ত।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১১: এটি খরিপ মৌসুমে চাষের জন্য উপযুক্ত।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১২: মধ্যম মাত্রার খরা সহিষ্ণু।

বারি হাইব্রিড ভুট্টা ১৪: এটি অন্যান্য ভোটার তুলনায় খাটো আকৃতির। এবং অধিক তাপ সহিষ্ণু।

শুধু এগুলোই নয় এগুলো ছাড়াও আরও অনেক হাইব্রিড ভুট্টার জাত বাংলাদেশের রয়েছে। তাই আপনার আবহাওয়া এবং মাটি পরীক্ষা করে উপযুক্ত জাত নির্বাচন করে ভট্টা চাষ করুন।

বীজের হার এবং দূরত্ব :

একটি বীজ থেকে আরেকটি বীজের দূরত্ব কত হবে এবং বীজের হার কেমন হবে এটি সম্পূর্ণ নির্ভর করে আপনার বীজের জাতের উপর। এবং আপনার জমির মাটির উপর। তাই বীজ কেনার সময় আপনাকে সুপারিশকৃত পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। এবং কৃষিবিদের পরামর্শ নিতে পারেন। একটি সাধারণ নিয়ম নিচে উল্লেখ করা হলো। 

প্রতি হেক্টরে ১০-১২ কেজি বীজ রোপন করতে পারেন। বীজ বপন করার সময় মাটির গভীরতা রাখা উচিত ২-৩ সেন্টিমিটার। এবং একটি বীজ থেকে আরেকটি বীজের দূরত্ব রাখতে হবে ৫-৬ সেন্টিমিটার। পাশাপাশি সারির ক্ষেত্রেও সঠিক দূরত্ব অবলম্বন করতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব রাখতে হবে ৬০-৭০ সেন্টিমিটার।

বীজ বপনের পর অবশ্যই মাটিতে পর্যাপ্ত পানি দিন এবং পোকামাকড় ও রোগ বালাই থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন।

সারের পরিমাণ এবং প্রয়োগ:

হাইব্রিড ভুট্টা চাষে ভালো ফলন পেতে সঠিক নিয়মে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে।

আর সার প্রয়োগের আগে ভালো ফলাফল পেতে আপনার জমির মাটি পরীক্ষা করে। মাটিতে থাকা পুষ্টির ঘাটতি অনুযায়ী সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হবে। এতে করে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

ইউরিয়া সার: ইউরিয়া সার প্রতি হেক্টরে ৫০০ থেকে ৫৫০ কেজি ব্যবহার করতে হবে। এবং এটিকে তিন ভাগ করে প্রথম ভাগ বীজ বপনের সময় প্রয়োগ করতে হবে। এবং দ্বিতীয় ভাগ বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। এবং তৃতীয় ভাগ বীজ বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। 

টিএসপি সার: প্রতি হেক্টরে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি টিএসপি সার প্রয়োগ করতে হবে। এটিকে বীজ বপনের পূর্বে প্রয়োগ করতে হবে। 

এমওপি সার: এমওপি সার প্রতি হেক্টরে ১৮৫ থেকে ২৩৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। এবং এটিকে দুই ভাগে ভাগ করে বীজ বপণের পূর্বে প্রথম ভাগ এবং দ্বিতীয় ভাগ প্রয়োগ করতে হবে বীজ বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর।

জিপসাম: প্রতি হেক্টরে ২১০ থেকে ২৩৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। এবং এটিকেও বীজ বপনের পূর্বে মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। 

জইংক সালফেট: প্রতি হেক্টরে ১২ থেকে ১৫ কেজি জইংক সালফেট প্রয়োগ করতে হবে। এটিকে বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।

বরিক এসিড: প্রতি হেক্টরে ৫ থেকে ৮ কেজি বীজ বপণের ২৫ থেকে ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।

উল্লেখ্য বিষয় হচ্ছে জাত, মাটির ধরন, আবহাওয়া এবং ঋতুর উপর বিবেচনা করে সার প্রয়োগের পরিমাণ এবং নিয়ম পরিবর্তন হতে পারে। তাই ভালো ফলাফল পেতে স্থানীয় কৃষিবিদের পরামর্শ নিন।

সেচ পদ্ধতি:

জমিতে অবশ্যই সঠিক নিয়মে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সেচ দিতে হবে। অন্যথায় জমিতে ভালো ফলন নাও হতে পারে। আর সেচ দেওয়ার সময় নির্ধারণ করতে হবে আপনার জমির উপর বিবেচনা করে। আপনার জমির আর্দ্রতা দেখতে হবে। পাশাপাশি বৃষ্টি হয়েছে কিনা সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে জমিতে শেষ দেওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো। বীজ বপনের পর সেচ দিতে পারেন কারণ তখন মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। পাশাপাশি চারা গজানোর পরও জমিতে হালকা সেচ দেওয়া উচিত। ফুল আসার সময় এবং দানা বাধার সময়ও জমিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকা প্রয়োজন। তাই এ বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে। এবং আপনার মাটির আর্দ্রতা বিবেচনা করে সঠিক নিয়মে জমিতে সেচ দিতে হবে।

রোগ বালাই এবং প্রতিকার:

ভুট্টা চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। তাই অবশ্যই রোগ বালাইয়ের সময় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এবং সঠিক জাত নির্বাচন করে জমিতে বীজ বপন করতে হবে।

ভুট্টা চাষে বেশ কিছু রোগ দেখা যায় এর ভিতরে একটি পরিচিত রোগ হলো। পাতা ঝলসানো রোগ এটির লক্ষণ পাতা বাদামি হয়ে যাওয়া। এমনটা হলে আক্রান্ত গাছকে ধ্বংস করতে হবে। এবং জমিতে পানি নিষ্কাশন এর ব্যবস্থা রাখতে হবে।

বিভিন্ন ছত্রাক জনিত রোগ হতে পারে। গাছে, গাছের গোড়া বা পাতার মধ্যে বিভিন্ন ছত্রাক দেখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ছত্রাক স্থান ধ্বংস করতে হবে এবং কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।

উইপোকা সহ বেশ কয়েকটি পোকা ভুট্টার জমিতে দেখতে পাওয়া যায়। যা গাছের গোড়া কেটে ফেলে আরও বিভিন্ন ক্ষতি করতে পারে। এমন কিছু দেখা গেলে দ্রুত কীটনাশক ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে।

আজকের এই আর্টিকেলে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আশা করি আমাদের আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পেরেছেন সঠিক নিয়মে হাইব্রিড ভুট্টা চাষ পদ্ধতি। আরো এমন সব আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখুন।

আরও জানুন – ধনিয়া চাষ পদ্ধতি এর জন্য মাটি নির্বাচন ও বীজ বপন জানুন